Sunday, August 5, 2018
আফজল আলি
ষষ্ঠ সংখ্যার editorial এর জন্য কোনো space ফাঁকা রাখা হবে কিনা ভাবছি । এত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে দেশে , সাহিত্য করে মানুষের জন্য কতটা কী করতে পারব । চল্লিশ লক্ষ মানুষকে জাতীয় পঞ্জিকরণের দোহাই দিয়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত । তাদের তো সংসার বাচ্চা ভিটে জমি আছে অথবা এতগুলো ও নেই একসাথে । কিন্তু মানুষ তো বটে । দীর্ঘদিন ভারতবর্ষের একটা রাজ্য থেকে সেই মাটির সাথে লালিত পালিত অভিযোজিত । হঠাত্ ই তাদের পায়ের থেকে মাটিটা সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হল। নিজেকে ওদের জায়গায় প্রতিস্থাপিত করে ভাবছি - ওদের মনের অবস্থা কতটা নিরুপায় , ক্ষতটা কত গভীর ।
আমরা বিশ্বাস করি এবং প্রচার করি পৃথিবীর মধ্যে কোনো বাউন্ডারি নাই , সমগ্র পৃথিবীতেই মানুষের যাতায়াত অবাধ হওয়াটাই স্বাভাবিক । আমরা বা রাষ্ট্রনায়করা খণ্ডিত ভাবনায় মোহে GOD GIFTED মাটিকে নিজের ভেবে অধিকার কায়েম করি । এই ভুল ধারণার জন্য মানুষের এত অত্যাচার, অমানবিকতার চিহ্ন এবং জাতীয়তাবাদের মতো উগ্রতার জাগরণ মানুষ যদি মানুষের জন্য না ভাবে, সদয় না হয় , তাহলে কে হবে । পৃথিবীতে এত যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পরও মানুষ সেই অন্ধই হয়ে আছে । তাদের
চোখ খোলেইনি। যুদ্ধের কুহেলিকা থেকে সাময়িক বেরিয়ে এসে নতুন করে শুরু হয়েছে ethnic cleansing এর মানসিকতা। 50-60 বছর নিজ ভূমে বাস করার পরও যদি উচ্ছেদ হতে হয় তাহলে এ লজ্জার দায় কার ? রাষ্ট্র যদি উৎপীড়ন যন্ত্র হয়ে ওঠে, সেই রাষ্ট্রের নাগরিকরা কোথায় যাবে যদি নাগরিকত্ব ই কেড়ে নেওয়া হয়। নাগরিকত্ব হরণ বা অস্বীকার করে রাষ্ট্র যদি বিপুল সংখ্যার মানুষকে শিকড়হীন করে দেয় তাহলে তারা কোথায় যাবে। ভিন দেশে ? হাস্যকর উপস্থাপন এবং চিন্তা ভাবনা যুক্তি সাজানো। সেলুকাস কি সেই কত আগেই জানতেন নাকি - কী বিচিত্র এই দেশ। এই নব্য চিন্তন বাহিনী ।
ভালবাসা ফিরে আসুক, সহিষ্ণুতা ফিরে আসুক, পারস্পরিক সৌভাতৃত্ব বজায় থাকুক । সাপের নিশ্বাস যেন বাতাস ভারাক্রান্ত না করে । খুব কষ্ট হয় । মানুষের জন্যই তো সমস্ত কিছু । যদি মানুষ ই কষ্ট পায় , তাহলে কীসের বৈভব কীসের সমৃদ্ধি ।
ষষ্ঠ সংখ্যার editorial এ ফাঁকা রাখা space টি নিজেই ভরিয়ে দিলাম ভিতরের চাপা কষ্ট দিয়ে ।
কবিতায় টুকটুক করে হাঁটছি । ভালো লাগে। এবারও সমস্ত কবিতা আমরা কোনোরকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পেয়েছি । কোনো আমন্ত্রিত নেই। কবিরা আমাদের সাথে আছেন । আমরা তৈরি করে নিই জিরো বাউন্ডারি মানসিকতার কবিদের। এক কদম এগিয়ে থাকার প্রাসঙ্গিকতায় জিরো বাউন্ডারি কাজ করছে। একটু space তৈরি করে দেওয়ার জন্য দলাদলিহীন কবিতার অঙ্গন।
আমরা কারো বাড়াভাতে ছাই দেওয়ার বিরুদ্ধে, কোনো প্রতিভাকে চেপে দেওয়ার মানসিকতা নেই, অপ্রয়োজনে পিছু লাগার কদর্য ইচ্ছা নেই। যা আছে তা হল ভালবাসাময় পৃথিবী তৈরি করা । নতুন হলেও voice উঁচু করতে অসুবিধা তো নাই।
ইদানীং কবিতা উৎসব আর কবিতা পাঠের দলাদলি দেখে একটা কথা মনে আসছে - বাংলা কবিতা , প্রতিভা মেধা ও গুণকে স্থান দেওয়া থেকে সরে আসছে না তো ? সাহিত্য দলাদলি পর্যায়ভুক্ত হলে , ছাপিয়ে দেওয়া ও ডাক পাইয়ে দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে চললে অচিরেই অঙ্গারকুল স্বর্ণ হিসেবে ভ্রম হবে। তাতে কি খুব ভালো হবে বাংলা কবিতার। উৎসব চলুক , দলাদলি বন্ধ হোক ।
রুমা ঢ্যাং অধিকারী
বৃষের কামের ফলে যে বৃষ্টির সৃষ্টি তার বিন্দুতেই বিশ্বের সিন্ধু স্থাপিত। বৃষ্টি নিয়ে কোন একটা আর্টিকেল পড়ে এই লাইনটাই লিখেছিলাম এক সম্পাদকীয় কলামে দুবছর আগে। আজ বৃষ্টিভেজা শ্রাবণদুপুরে এই লাইনটাই কেন জানি না বারবার মনে আসছে। আর এমন বর্ষারদিনে ফেসবুক আর হোয়াটস অ্যাপ এক বন্যায় আকণ্ঠ ডুবে। প্রায় প্রতিটা স্ট্যাটাসেই বন্ধুত্বসুলভ আঁকাব্যাঁকা নিজেদের ছবি আর পোস্ট দেখে মনে মনে এইটুকু একবার আউড়ে নেওয়া যায় বাঙালী তার চিরায়ত স্বভাবের থেকে একটুও বদলায়নি যতই তার পরিবর্তিত রহনসহনে অভিযোজিত হতে থাকুক না কেন। শ্রাবণের নিউস হেডলাইনগুলোয় দুদিনের গঙ্গার ভাঙন ইস্যুর মতই এগুলো আসে যায়। আর বাঙালী খেয়েপরে কোমর দোলায়। ওই আবার কোমর দোলানোর কথায় সদ্য উদ্ভুত কিটি চ্যালেঞ্জ এসে গেল। শুনেছেন নিশ্চয় চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে সম্পূর্ণ একটা জীবনকে বাজী রেখে ড্রেকের "In My Feeling" গানের সাথে নেচে যাওয়াটাই হল এই চ্যালেঞ্জ যেটা সোশ্যাল মিডিয়া স্টার Shiggy এবং তারপরেই Odell Beckham jr.এর হাত ধরে শুরু হয়ে এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী আর একে থামানোর জন্য পুলিশের এক বাড়তি কাজও শুরু হয়েছে বলা যায়। যদিও এইসব সোশ্যাল হৈচৈ খবরের মাঝে সেই দাঁড়িওয়ালা ৫৯ বছরের আব্দুল মোতলেবের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকাহীন হওয়ার চিন্তার ভাঁজের কোন পরিবর্তন হবে কি! কিংবা সেই ইমরান খান যার গাড়িতে ১২টা দিন অতিথি হয়ে আসাম থেকে অরুণাচল আবার অরুণাচল থেকে আসাম ঘুরে এসেছি এই তো সেদিন তার কপালে চিন্তার কয়েকটা ভাঁজ কি এখন পড়বে না! আসলে ধর্ম এখন রঙিন। অথচ যে রঙে শুধু শারীরিক নয় মানসিক ভারসাম্যও ঠিক থাকে সেই রং ধারণকারীরা কি এই সংজ্ঞাটাকেই বদলে দিলেন না! প্রতিবাদ বাক স্বাধীনতারই এক পর্যায় তাই প্রতিবাদ হোক কলম থেকে সেইসব দৃঢ়তাই গড়িয়ে নামুক। এখন আসুন এসব সাময়িক সরিয়ে ম্যাগাজিনের প্রসঙ্গে আসি।
আফজলদা আগেই বলে দিয়েছেন যে এবারে বিজ্ঞাপন ছাড়াই প্রচুর লেখা এসেছে এবং অন্যান্যবারের মতই সিলেকশনের মাধ্যমে আমরা নির্বাচিত লেখাগুলোকে ম্যাগাজিনে রেখেছি। এবারের ম্যাগাজিনের ব্লগটা একটু অন্যরকম সাজিয়েছি। আশা করি ভালো লাগবে সব্বার। এই কালাদিনেও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের লেখা আপনাদের একটা অন্যজগতে নিয়ে যাবে এবং আপনারাও কিছুটা তৃপ্তি পাবেন কবিতাগুলো পাঠে একথা বলাই যায়।
এই সংখ্যাটার মধ্য দিয়েই জিরো বাউন্ডারি কবিতা এক বছরের প্রায় শেষ পর্যায়ে পরের সংখ্যা থেকে দ্বিতীয় বর্ষ শুরু হবে। তাই আগাম সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আর একটা কথা না বললেই নয় যে ডাঃ অনুপ বৈরাগীর জিরো বিতানের লেখাটা পেজে তোলার সময় পড়তে গিয়ে প্রায় চোখে জল এসে গেছিল। খুব ভালো একটি লেখার মধ্য দিয়ে অনুপ থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে কিছু বক্তব্য রেখেছে। সেসব জানতে নিশ্চয় পড়বেন আপনারা বাকি সব লেখার পাশাপাশি। আর হ্যাঁ মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন। আপনাদের ভালোলাগা না লাগা দুটোই আমাদের পাথেয়স্বরূপ। যারা পড়বেন বা যারা লিখেছেন বা যারা প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে চলেছেন ও পাশে থেকেছেন সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
বর্ষার সাথে ডেঙ্গু এখন জড়িয়ে গেছে। তাই সাবধানে থাকুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর বাড়ির চারপাশ নজরে রাখুন। সর্বোপরি নিজেকে ভালোবেসে ভালো থাকুন অপরকেও ভালো রাখুন।
Subscribe to:
Posts (Atom)