ষষ্ঠ সংখ্যার editorial এর জন্য কোনো space ফাঁকা রাখা হবে কিনা ভাবছি । এত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে দেশে , সাহিত্য করে মানুষের জন্য কতটা কী করতে পারব । চল্লিশ লক্ষ মানুষকে জাতীয় পঞ্জিকরণের দোহাই দিয়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত । তাদের তো সংসার বাচ্চা ভিটে জমি আছে অথবা এতগুলো ও নেই একসাথে । কিন্তু মানুষ তো বটে । দীর্ঘদিন ভারতবর্ষের একটা রাজ্য থেকে সেই মাটির সাথে লালিত পালিত অভিযোজিত । হঠাত্ ই তাদের পায়ের থেকে মাটিটা সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হল। নিজেকে ওদের জায়গায় প্রতিস্থাপিত করে ভাবছি - ওদের মনের অবস্থা কতটা নিরুপায় , ক্ষতটা কত গভীর ।
আমরা বিশ্বাস করি এবং প্রচার করি পৃথিবীর মধ্যে কোনো বাউন্ডারি নাই , সমগ্র পৃথিবীতেই মানুষের যাতায়াত অবাধ হওয়াটাই স্বাভাবিক । আমরা বা রাষ্ট্রনায়করা খণ্ডিত ভাবনায় মোহে GOD GIFTED মাটিকে নিজের ভেবে অধিকার কায়েম করি । এই ভুল ধারণার জন্য মানুষের এত অত্যাচার, অমানবিকতার চিহ্ন এবং জাতীয়তাবাদের মতো উগ্রতার জাগরণ মানুষ যদি মানুষের জন্য না ভাবে, সদয় না হয় , তাহলে কে হবে । পৃথিবীতে এত যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পরও মানুষ সেই অন্ধই হয়ে আছে । তাদের
চোখ খোলেইনি। যুদ্ধের কুহেলিকা থেকে সাময়িক বেরিয়ে এসে নতুন করে শুরু হয়েছে ethnic cleansing এর মানসিকতা। 50-60 বছর নিজ ভূমে বাস করার পরও যদি উচ্ছেদ হতে হয় তাহলে এ লজ্জার দায় কার ? রাষ্ট্র যদি উৎপীড়ন যন্ত্র হয়ে ওঠে, সেই রাষ্ট্রের নাগরিকরা কোথায় যাবে যদি নাগরিকত্ব ই কেড়ে নেওয়া হয়। নাগরিকত্ব হরণ বা অস্বীকার করে রাষ্ট্র যদি বিপুল সংখ্যার মানুষকে শিকড়হীন করে দেয় তাহলে তারা কোথায় যাবে। ভিন দেশে ? হাস্যকর উপস্থাপন এবং চিন্তা ভাবনা যুক্তি সাজানো। সেলুকাস কি সেই কত আগেই জানতেন নাকি - কী বিচিত্র এই দেশ। এই নব্য চিন্তন বাহিনী ।
ভালবাসা ফিরে আসুক, সহিষ্ণুতা ফিরে আসুক, পারস্পরিক সৌভাতৃত্ব বজায় থাকুক । সাপের নিশ্বাস যেন বাতাস ভারাক্রান্ত না করে । খুব কষ্ট হয় । মানুষের জন্যই তো সমস্ত কিছু । যদি মানুষ ই কষ্ট পায় , তাহলে কীসের বৈভব কীসের সমৃদ্ধি ।
ষষ্ঠ সংখ্যার editorial এ ফাঁকা রাখা space টি নিজেই ভরিয়ে দিলাম ভিতরের চাপা কষ্ট দিয়ে ।
কবিতায় টুকটুক করে হাঁটছি । ভালো লাগে। এবারও সমস্ত কবিতা আমরা কোনোরকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পেয়েছি । কোনো আমন্ত্রিত নেই। কবিরা আমাদের সাথে আছেন । আমরা তৈরি করে নিই জিরো বাউন্ডারি মানসিকতার কবিদের। এক কদম এগিয়ে থাকার প্রাসঙ্গিকতায় জিরো বাউন্ডারি কাজ করছে। একটু space তৈরি করে দেওয়ার জন্য দলাদলিহীন কবিতার অঙ্গন।
আমরা কারো বাড়াভাতে ছাই দেওয়ার বিরুদ্ধে, কোনো প্রতিভাকে চেপে দেওয়ার মানসিকতা নেই, অপ্রয়োজনে পিছু লাগার কদর্য ইচ্ছা নেই। যা আছে তা হল ভালবাসাময় পৃথিবী তৈরি করা । নতুন হলেও voice উঁচু করতে অসুবিধা তো নাই।
ইদানীং কবিতা উৎসব আর কবিতা পাঠের দলাদলি দেখে একটা কথা মনে আসছে - বাংলা কবিতা , প্রতিভা মেধা ও গুণকে স্থান দেওয়া থেকে সরে আসছে না তো ? সাহিত্য দলাদলি পর্যায়ভুক্ত হলে , ছাপিয়ে দেওয়া ও ডাক পাইয়ে দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে চললে অচিরেই অঙ্গারকুল স্বর্ণ হিসেবে ভ্রম হবে। তাতে কি খুব ভালো হবে বাংলা কবিতার। উৎসব চলুক , দলাদলি বন্ধ হোক ।
No comments:
Post a Comment