গল্পদের না বলা কথা
গল্পেরা যদি একটু কথা বলতে পারতো তবে কত হাজার চেপে রাখা যন্ত্রণা তারস্বরে চেঁচিয়ে নিজেকে সেদিন সে ব্যক্ত করত!
কত না বলা কথা বকবক বাচালতায় নিজেকে উজার করে ফেলত!
কিংবা ফিসফিস করে অতিগোপনে গল্পগুলো তাদের নিজের আপন সইকে শ্লীল-অশ্লীল সবটাই সযত্নে শুনিয়ে রাখত!
গল্পেরা যদি নিজেকে একটু এডিট করতে পারতো তবে হেইয়্যা এক রাবার দিয়ে সব দুঃখের শব্দগুলো এক নিমেষেই সে মুছে ফেলত!
অসম্পূর্ণ গল্পগুলো সাজিয়ে দিত আরেকবার!
কিংবা ঐ দুর্বোধ্য প্রবন্ধগুলোকে মানুষের ভাষায় প্রকাশ করার সুযোগ করে দিত ভীষণ!
তবে সেই সৌভাগ্য গল্পদের এখনও হয়নি!
হয়তো আর হবেও না!
এখনও পর্যন্ত সমস্ত গল্পেরাই আপাদমস্তক নির্বাক!
আজও গল্পদের পরভাষীর সাহায্য নিতে হয়!
কবিতার কাছেও বেজায় মাত খেতে হয়েছে!
মানুষ আর বিস্তর লেখা পড়তে চায় না!
মানুষের হাতে আজ সময় বড্ড কম!
তাই লেখকেরাও পেশাদারীত্বের তাগিদেই কবিত্বে ঝুঁকে পড়েছে!
লাইব্রেরী গুলো এখন শুধুমাত্র "কর্মসংস্থান" পড়ানোর ঠিকানা অথবা শাসকের বিজ্ঞাপনের স্তাবকতা শেখার আঁতুরঘর!
পাঠকেরাও কৌশলে কিছু গল্পদের ঠাঁই দিয়েছে "গল্প কবিতায়"!
গল্প কবিতা?
হা হা হা
সে তো অবশেষে কবিতাই!
আর আধমরা বেঁচে থাকা গল্পগুলো?
পড়ে থাকে শুধু গল্পদের মোড়কের উপর নোংরা ধুলোর চাদরের পুরু স্তর!
পড়ে থাকে ড্রয়িংরুমের এককোণের অতীতের শুধু স্মৃতিকথা হয়ে!
পড়ে থাকে হকার ভাঙারির কাঁধের ঝোলাতে ঠোঙা হবার অপেক্ষায়!
কিংবা বিচ্ছিরি ভাবে অপেক্ষায় সেজে থাকে বইমেলার স্টলের টেবিলে সন্ধ্যেতে ঐ সেজে থাকা বেশ্যার নাটুকে প্রেমিক খদ্দের পাবার অপেক্ষায়!
কখনো সুখ পায়নি সে!
অপরের কষ্ট-অন্যের যন্ত্রণা-অন্যের শোক-মুনিবের কতো না বলা কথা বহন করতে করতে সে আজ রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত!
যৌবনের সাবলীলতা আজ বহুক্রোশ দূরে সে পেরিয়ে এসেছে!
ভগ্ন শরীরটা সাথে নিয়েই মৃত্যুর সায়াহ্নে সে আজ প্রাসঙ্গিকতার পাঞ্জা লড়ছে!
সত্যিই সময় কতটা ব্যভিচারী হয়ে ওঠে!
সময় কতটা নিষ্ঠুর!
প্রয়োজন ফুরোলে সময় কতটা দূরে ছুড়ে ফেলে দেয় সেদিনের প্রয়োজনীয়তাকেই!
"তোমরা মানুষেরা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারো!"
সত্যিই তো মানুষেরা কতটা নিষ্ঠুর!
একদিন প্রয়োজনেই মানুষেরা পৃষ্ঠাকে পৃষ্ঠা লিখে গল্পকে কাছে টেনে নিয়েছিল।
কতই না ভালোবেসেছিল!
আর আজ যান্ত্রিকতার আধুনিকতায় মানুষেরা অ্যানড্রয়েডের কিপ্যাডেই নিজেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে!
ল্যাপটপের ইনবক্সে কিংবা সোশ্যাল সাইটের অতিরঞ্জিকতায় নিজেকে সে অ্যাডিকটেড্ করে ফেলেছে!
আজ গল্পেরা হয়তো সেদিনের ডাইনোসর প্রজাতির মতো শেষ অস্তিত্বটুকু বাঁচানোর জন্য ডারউইনের মতবাদের সাথে আপোস করে নিয়েছে!
লড়াই করছে মানুষের পৈশাচিক বিক্রিত বিবেকের সাথে!
এ হয়তো তার শেষ লড়াই!
বেঁচে থাকার শেষ লড়াই!
কে শুনবে অসহায় গল্পদের এই আর্তনাদ?
কে শুনবে গল্পদের হাজার হাজার না বলা সব কথা?
কে শুনবে?
কে শুনবে?
কে শুনবে?
No comments:
Post a Comment