একলা মাঠ
শূন্যতা কখনো বুঝি ছুঁয়ে দেয় পাড়
নিষেক জুড়িয়ে গেলে ফিরে যায় আদর
পূর্বাভাস সেভাবে তো মেলেনি বহুকাল
গাছে গাছে টাঙানো আছে ব্যর্থ ইস্তেহার
কে যেন রটিয়েছে গোপন আলাপন, তাহলে-
হাওয়া যদি ভিজে যায় কী এমন ক্ষতি!
ধান কাটা হলে যে মাঠ পড়ে থাকে একা
রাতে গলা জড়িয়ে তার কান্না শুনেছো , পথিক?
মাছ
তখন নেহাতই ছোট
বাবা স্নান সেরে গায়ত্রীমন্ত্র জপতে জপতে ধূপ দিত সারা বাড়ি
ঘর ভরে উঠতো মায়াবী সুরে
আমি গুটিগুটি পায়ে বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়াতাম
আমার তেল জপজপে চুলে বাবা টেরি এঁকে দিত
যে আসনে বাবা বসতো সেটা মার তৈরি, ফুল আঁকা
বাবা জল ছড়িয়ে খাওয়া শুরু করতো
মা হাওয়া করতে করতে এক ঠায় তাকিয়ে থাকতো বাবার চোখের দিকে
একদিন মা বলেছিল ,নদীর মাছ খেতে বড় ইচ্ছে করে
বাবা জানিয়েছিল ফেরার সময় বাজার ঘুরে আসবে,
সেদিন অনেকরাত্রে বাবা বাড়ি ফিরেছিল
ফিসফিস করে বলেছিল, কারখানা লকআউট,
এর মানে আমি বুঝিনি
আমি শুধু উঁকি মেরে খুঁজছি মার প্রিয় নদীরমাছগুলোকে
দেখেছিলাম,
মাছ নয়, দেখি থলির ভেতর ইয়া বড় একটা নদী খাঁ খাঁ করছে...
জেগে থাকে বালিঘড়ি
ধূ ধূ ফাঁকা প্রান্তরে নেমে আসে সন্ধের ফানুস
মোমবাতি নেভেনি এখনো, শুধু দমকা হাওয়ায় পিটপিট করছে
এইমাত্র ‘ কেয়াবাৎ, কেয়াবাৎ ‘ বলে এক উটপালক চিৎকার করে উঠলো
ও কখনো শহুরে মানুষের জন্মদিন পালন দেখেনি
চাঁদ এখানে অনেকটা বড়, আগুনের পিন্ড
কয়েকটা উটশাবক দুধ খেতে খেতে সেদিকে তাকিয়ে আছে
ঘোরানো সিঁড়ির মতো নেমে এসেছে বালিয়াড়ি
কোন জটিলতা নেই, কোন জড়তা নেই একটুও
কোথা থেকে উড়ে আসে ধূসর-রঙা অলৌকিক গালিচা
কে যেন বিড় বিড় করে হারিয়ে যাওয়া বেদুইনের গল্প বলে
বালিঘড়ি জেগে থাকে, এখানে সব গল্প চেনা নয়
রাত গভীর হলে মরুঝড়ে নিভে আসে মোম
ঈশ্বর ও রাজদন্ড
এরপর ঈশ্বর কয়েকজন মানুষকে ডেকে পাঠালেন
বললেন, আমি ক্লান্ত, অবসন্ন
এবার আমার নিদ্রার সময় আসন্নপ্রায়
এই বলে মানুষের হাতে ধরিয়ে দিলেন রাজদন্ড
প্রাসাদের ভেতর মিলিয়ে গেলেন ভগ্ন ঈশ্বর
আপেল বাগানে সভায় বসলেন মানুষেরা
কীভাবে চলবে মানব-সভ্যতা?
কার হাতে থাকবে রাজদন্ড?
চলছে তর্কবিতর্ক
দিন যায়। তর্ক পৌঁচ্ছে যায় কলহে
সেখান থেকে হিংসা তান্ডবে
তছনছ হয়ে যাচ্ছে প্রমোদ-উদ্যান
মহান ঈশ্বর তখনও নিদ্রিত।
No comments:
Post a Comment